২ নভেম্বর ২০২৫ - ০১:১২
সুদানের রাস্তাজুড়ে শত শত লাশ।

সুদানের যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এল-ফাশের (El-Fasher) থেকে পালিয়ে আসা মানুষজন ধীরে ধীরে র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF)-এর হাতে সংঘটিত ভয়াবহ সহিংসতার চিত্র তুলে ধরছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): সহিংসতায় জর্জরিত উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশের এ RSF গত রবিবার শহরটি দখল করার পর থেকে কমপক্ষে ১,৫০০ মানুষকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে একটি বহুল নিন্দিত হত্যাযজ্ঞে একটি হাসপাতালে কমপক্ষে ৪৬০ জন নিহত হয়েছে।


গত শনিবার থেকে ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই হেঁটে, প্রায় ৭০ কিলোমিটার (৪৩ মাইল) পশ্চিমে তাভিলা শহরে পালিয়ে গেছে। তাভিলা শহরে ইতোমধ্যেই প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়ে আছে।


এ বিষয়ে পাঁচ সন্তানের জননী হায়াত এএফপি বার্তা সংস্থাকে স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে জানান, সাতজন RSF যোদ্ধা তাদের বাড়িতে লুটপাট চালায়, তার অন্তর্বাস পর্যন্ত তল্লাশি করে এবং তার ১৬ বছর বয়সী ছেলেকে তার চোখের সামনে হত্যা করে। তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্মরণ করে বলেন, ‘‘আমরা রাস্তায় বহু মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছি এবং আহতরা খোলা আকাশের নিচে পড়ে ছিলো, কারণ তাদের পরিবার তাদের বহন করে নিয়ে যেতে পারেনি।’’

কামানের গোলার আঘাতে আহত আরেকজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি হুসেইন একটি পরিবারকে তাদের মাকে গাধার গাড়িতে নিয়ে যেতে সাহায্য করার সময় তাভিলা পৌঁছান। তিনি বলেন, ‘‘এল-ফাশেরের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ, রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে আছে, এবং তাদের কবর দেওয়ার মতো কেউ নেই। আমরা এখানে পৌঁছাতে পেরে কৃতজ্ঞ, যদিও আমাদের পরিধানে কেবল আমরা যা পরেছিলাম, তাই আছে।’’

এল-ফাশের থেকে বাস্তুচ্যুত অন্য এক নারী আয়েশা ইসমাইল অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) সংবাদ সংস্থাকে জানান, ‘‘সবসময় শেলিং (কামানের গোলা নিক্ষেপ) ও ড্রোন হামলা চলছিল। আমরা বাড়িতে লুকিয়ে না থাকলে তারা দিনের পর দিন রাইফেলের বাট দিয়ে আমাদের আঘাত করত। রাত ৩টায় আমরা লুকিয়ে বাড়ির বাইরে এসে হিল্লাত আলশেথ (উত্তর দারফুরের একটি এলাকা) পৌঁছাই, যেখানে আমাদের সবকিছু লুট করা হয়। তারা আমাদের সব কিছু নিয়ে যায়, আমি এখানে খালি পায়ে এসেছি, এমনকি আমার জুতোও তারা নিয়ে গেছে।’’

তাভিলা ক্যাম্পে কর্মরত সাহায্য কর্মীরা জানাচ্ছেন, এল-ফাশের থেকে পালিয়ে আসা বলে মনে করা বেশিরভাগ মানুষ এখনো তাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। তাভিলা ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনায় থাকা নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার মাথিল্ড ভু এপি’কে বলেন, ‘‘তাভিলায় যারা পৌঁছেছে, তাদের সংখ্যা খুবই কম। অন্যরা কোথায়? এটিই পালানোর পথের ভয়াবহতা বলে দেয়।’’

জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক বুধবার (২৯ অক্টোবর) জানান, তাভিলা এবং দারফুরের অন্যান্য স্থানে ত্রাণ কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য জাতিসংঘ সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফান্ড (CERF) থেকে সুদানের জন্য ২ কোটি ডলার (২০ মিলিয়ন ডলার) বরাদ্দ অনুমোদন করেছে।

দুজারিক আরও জানান, সুদানের ‘সৌদি হাসপাতাল’ এ ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যার ঘটনায় জাতিসংঘ আতঙ্কিত। হাসপাতালটিতে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘বৃদ্ধ, আহত এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ঐ এলাকায় আটকে আছেন এবং পালাতে পারছেন না’’।

সুদান বিশেষজ্ঞ শায়না লুইস সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এই হত্যাযজ্ঞ ‘‘সবচেয়ে বেশি মর্মান্তিক, কারণ আমরা সুশীল সমাজ উত্তর দারফুরের বেসামরিক জনসংখ্যার জন্য এই নৃশংসতার ঝুঁকির বিষয়ে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করে আসছি।’’

শহরের মধ্যে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাবে শত শত হাজার মানুষ ১৮ মাস ধরে আরএসএফ এর অবরোধে আটকা পড়েছিল, এরপরেই সুদানের সেনাবাহিনী শহর থেকে সরে আসে।

লুইস আরও বলেন, সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো—মহাকাশ থেকেও এই রক্তপাতের চিহ্ন দৃশ্যমান। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক গবেষণা ল্যাব (HRL) স্যাটেলাইট চিত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, মাটিতে মানুষের মৃতদেহের মতো বস্তুর স্তূপ এবং বিশাল এলাকাজুড়ে লালচে বিবর্ণতা দেখা যাচ্ছে।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha